আজ বুধবার, ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইটিপিতে নজর দিবে কে

# অভিযান ঠেকাতে ইটিপি নির্মাণ হলেও তা ব্যবহার করছে না বহু ব্যবসায়ী

# আমি ইটিপি ব্যবহার করলাম, অন্যরা দুষিত বর্জ্য ফেলল, তাতে লাভ নেই : হাতেম

স্টাফ রিপোর্টার :

বন্যা ও বর্ষা মৌসুমের বদান্যতায় পানি বেড়েছে শীতলক্ষ্যা এবং বুড়িগঙ্গায়। কেটেছে দুষণের মাত্রাও। নদীর স্বচ্ছ পানিতে জলকেলিতে মত্ত হতে দেখা যায় শিশু-কিশোরদের। বছরের এই সময়টিতে লক্ষ্যা-গঙ্গা তাদের যৌবন ফিরে পেলেও শুষ্ক মৌসুমে তা যেন প্রাণ হারায়।
মূলত, শীতে পানি কমে এলে ডাইং কারখানার দূষিত তরল বর্জ্যরে আধিক্য বেড়ে যায় নদীতে। ওই মৌসুমে নদী রক্ষায় বিভিন্ন মহল থেকে ভেসে আসে ‘দরদের ঢেউ’। তবে দূষণ রোধে কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া হয়নি আজও। বেশ কয়েক বছর আগে শীতলক্ষ্যা রক্ষায় সেন্ট্রাল ইটিপি প্লান্টের কথা জানিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষা চালানো হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে, সেন্ট্রাল ইটিপির প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি নিজের একটি পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। গতকাল নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সে এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘২০০২ সালে দেশের বাহিরে থেকে একটি টিম এসেছিল। তারা দেখতে চেয়েছিল যে, পরিবেশ রক্ষার্থে কোথায় ইটিপি (ইফল্যুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) করা যায়। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল যে, ওই টিমকে যেন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ভিজিট করাই। আমি তাদের নিয়ে ভিজিট করলাম। সেখানে বলা হলো যে, একটি খালের দুই মাথায় যদি সেন্ট্রাল ইটিপি করা যায়, তাহলে পানিটা পরিশোধন হয়ে তারপর নদীতে যাবে এবং নদী দূষণমুক্ত থাকবে। সেখানে প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে মাসিক হারে বিল আদায় করা হবে। যেভাবে আমরা বিদ্যুৎ বিল প্রদান করি। এটাকে কঠোর ভাবে সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সেই কার্যক্রমটা আর এগোয়নি।’
নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের বেস্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ইটিপি নিয়ে স্টাডি হলেও এই উদ্যোগ বন্ধ রয়েছে। তবে নদী রক্ষায় তারা ইটিপি ব্যবস্থা নিশ্চিত করণে কাজ করে গেলেও কারখানা মালিকদের সদিচ্ছার অভাব ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, ‘ইটিপির সঠিক ব্যবহার না করাটা দুঃখনজক হলেও এতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়ও রয়েছে। কেননা, বর্জ্য পরিশোধনকরণ ক্যামিকেলে সরকার প্রায় ৫০ শতাংশ কর নিয়ে থাকেন। এতে ব্যয় কুলিয়ে উঠতে পারছে না মালিকরা। পাশাপাশি পরিকল্পিত ভাবে সেন্ট্রাল ইটিপি করার আহবান জানানো হলেও তা আশ^াসেই আটকে আছে। ফলে দূষণ রোধ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
গতকাল নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য নিয়ে আমি বহুবার কথা বলেছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা খুব কঠিন মানুষ। উনি পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।’
হাতেম বলেন, ‘সাংবাদিকদের উচিৎ এই বিষয়টি স্প্যাসিফিক ভাবে তুলে ধরা। দেখুন, আমার ইন্ডাস্ট্রিতে ইটিপি রয়েছে। আমি টাকা খরচ করে ইটিপি নির্মাণ এবং তা ব্যবহার করে বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে খালে পানি ছাড়লাম, কিন্তু আরও ২০০ কারখানা ইটিপি ব্যবহার ছাড়াই খালে ক্যামিকেলযুক্ত দুষিত বর্জ্য ফেলে যাচ্ছে। তো আমি যে ইটিপি ব্যবহার করলাম, এটাতে কোনো লাভ হলো না। খাল হয়ে নদীতে তো দূষিত পানিটাই যাচ্ছে। আমি বলবো কেউ যেন এভাবে পরিবেশ দূষণ করতে না পারে। এই বিষয়ে আমরা পরিবেশ মন্ত্রনালয়কে কঠোর হওয়ার আহবান জানাই।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জে এখনো পর্যন্ত ৩৪৬টি প্রতিষ্ঠানে ইটিপি নির্মাণ করা হয়েছে। আর ১১৪টি প্রতিষ্ঠান এখনো ইটিপি নির্মাণ করেনি। ওই ১১৪টির মধ্যে ১০টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
অধিদপ্তরটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ইফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) বা বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ স্থাপনা নির্মাণ করলেও নদীগুলো দূষণমুক্ত হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো, শিল্প মালিকরা ইটিপি নির্মাণ করলেও তা নিয়মিত ব্যবহার করেন না। অভিযান ঠেকাতে মালিকরা লোক দেখানো ইটিপি নির্মাণ করে রেখেছেন। ফলে ইটিপি থাকলেও বিষাক্ত তরল বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই ড্রেন ও খালের মাধ্যমে তা নদীতে ফেলে যাচ্ছেন শিল্প মালিকরা।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেছিলেন, ‘এটা নিয়ে শিল্প মালিক এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে কথা বলতে হবে। সবার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে হবে। তারপর করনীয় সম্পর্কে উদ্যোগ নিহেত হবে।’